হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব (১) হযরত ফাতেমা মাসুমা (সাঃআঃ)-এর শাহাদাত বা মৃত্যু।
হযরত মাসুমা (সাঃআঃ)-এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় :
তাঁর নাম ছিল 'ফাতিমা' এবং সপ্তম ইমাম হযরত মুসা ইবনে জাফর (আঃ) হলেন তাঁর পিতা, তাঁর মায়ের নাম ছিল নাজমা খাতুন এবং ইমাম রেযা (আঃ) ছিলেন তাঁর জ্যৈষ্ঠ ভ্রাতা।
তিনি প্রথম যুল ক্বাদাহ ১৭৩ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২৮ বছর বয়সে ১০'ই রবিউস সানী ২০১ হিজরিতে শাহাদৎ বরণ করেন। [১] আর 'বাগে বাবলান' (যেখানে তাঁর পবিত্র মাজার অবস্থিত) তাঁকে দাফন করা হয়।
মদিনা থেকে খোরাসান যাত্রা :
২০১ হিজরিতে হযরত মাসুমা (সাঃআঃ) নিজের ভাই ও ইমাম ওয়াক্ত হযরত আলি রেযা (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাতের জন্য নিজের কয়েকজন ভাইকে নিয়ে মদীনা থেকে খুরাসানের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু 'সাওয়া' নামক শহরে সরকারি কর্মকর্তা ও শত্রুরা তাঁর কাফেলায় আক্রমণ করে।[২]
তাঁর শাহাদাতের কারণ :
এটি অনস্বীকার্য সত্য যে, মৃত্যুর বিভিন্ন কারণ রয়েছে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে শাহাদাতই হল পছন্দনীয় ও সর্বোত্তম মৃত্যুর উপায়।[৩]
এটা স্পষ্ট যে, শাহাদাতের জন্য তরবারি দিয়ে শহীদ করার প্রয়োজন হয় না, তবে অন্যান্য কারণগুলি শাহাদাতের কারণ হতে পারে, যেমন :
১) অত্যধিক শোক এবং দুঃখ।
হযরত মাসুমা (সাঃআঃ) যিঁনি নিজের ভাই ইমাম রেযা (আঃ)-এর সাথে শৈশব থেকেই অন্তরঙ্গ ছিলেন এবং ইমাম মুসা কাযিম (আঃ)-এর শাহাদাতের পর ইমাম রেযা (আঃ) তাঁকে লালন-পালন করেন। যখন ইমাম রেযা (আঃ)-কে জোরপূর্বক মদীনা থেকে খোরাসানে ডাকা হয়, তখন এই বিচ্ছেদ হযরত মাসুমা (সাঃআঃ)-কে অনেক দুঃখিত করে তোলে।
'মরু' তে হযরত মাসুমা (সাঃআঃ)-এর সামনে তাঁর ভাইদেরকে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়। তিনি তাঁর ভাই ও প্রিয়জনদের রক্ত দেখে খুবই দুঃখ পান। আর তা সহ্য না করতে পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন।[৪]
তিনি বলেন : "আমাকে পবিত্র কোমে নিয়ে চলো।" কারণ আমি আমার পিতার কাছে শুনেছি যে, কোম শহর হল আমাদের শিয়াদের কেন্দ্রস্থল।[৫]
২) শাসকদের নৃশংসতা।
এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য যে, আব্বাসী খলিফা 'মামুন' ছিল আহলেবায়েত (আঃ)-এর মহা শত্রু এবং বিভিন্ন অজুহাতে আহলেবায়েত (আঃ)-এর অনুসারীদের ওপর চরমভাবে নিপীড়ন চালাতো। এমনকি সে ইমাম রেযা (আঃ)-কে নির্মমভাবে হত্যা করে। অতএব, তৎকালীন রাজনৈতিক চক্রান্ত অনুযায়ী, মামুনের পক্ষে হযরত মাসুমা (সাঃআঃ)-এর ক্ষতি করা বেশি সম্ভব ছিল। কারণ সে হযরত মাসুমা (সাঃআঃ)-এর পাণ্ডিত্যপূর্ণ অবস্থান ও গুণ সম্পর্কে অবগত ছিল এবং এটাও জানতো যে, হযরত মাসুমা (সাঃআঃ) ইমাম রেযা (আঃ)-এর সাথে থাকলে তার সরকার উৎখাত করে দিতে পারেন। তাই হযরত মাসুমা (সাঃআঃ) এবং তাঁর সাথে তাঁর আত্মীয়দের আসার খবর মামুনকে বিরক্ত করে তোলে। আর সেই সাথে সে চাইতো না যে, এই কাফেলা ইমাম রেযা (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করুক, যার ফলে মাঝপথে কাফেলার উপর আক্রমণ করে।
৩) হযরত মাসুমা (সাঃআঃ)-কে বিষপান করানো হয়।
একটি রেওয়ায়েত অনুসারে, হযরত মাসুমা (সাঃআঃ) তাঁর নির্দোষ পূর্বপুরুষদের মতো নিজের শাহাদাতের বিষয়ে অবগত ছিলেন এবং তিনি এটাও জানতেন যে, পবিত্র কোম শহরে তিনি শাহাদাত বরণ করবেন। সম্ভবত সেই কারণেই তিনি শেষ মুহূর্তে পবিত্র কোম নগরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
রেওয়ায়েত অনুসারে, 'সাওয়া'তে এক মহিলা তাঁকে (সাঃআঃ) বিষ পান করায়।[৬]
ফলাফল :
এসব ঐতিহাসিক প্রমাণের ভিত্তিতে অনুমান করা যায় যে, হযরত মাসুমা (সাঃআঃ)-এর মৃত্যু প্রাকৃতিক মৃত্যু ছিল না এবং বিভিন্ন প্রকারের নির্যাতন ও বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে তাঁকে শহীদ করা হয়। যে কথা নিশ্চিত সেটা হল তিনি তাঁর মহীয়সী দাদী হযরত ফাতিমা যাহরা (সাঃআঃ)-এর সাথে বিভিন্ন মিলের [৭] মধ্যে একটি মিল হল যে, তাঁর উপরেও নবী করিম (সাঃ)-এর কন্যার মতো লোমহর্ষক অত্যাচার করা হয় এবং প্রচন্ড নিপীড়ন ও দুর্ভোগের শিকার হয়ে তিনি শাহাদৎ বরণ করেন।
তাই হযরত মাসুমা (সাঃআঃ)-এর গুণাবলী ও পূর্ণতা এবং তাঁর জীবনের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাঁর মৃত্যুকে মৃত্যু বা ইন্তেকালের পরিবর্তে 'শাহাদাত' বলা ভুল হবে না।
চলবে..............
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদ ওয়া আ'লে মুহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ওয়াহ শুরনা মাআহুম ওয়াল আন আদুওয়াহুম।
.. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. ...
তথ্যসূত্র:
[১] অসিলায়ে মাসুমিয়া, পৃষ্ঠা ৬৫ নুযহাত-উল-আবরার থেকে প্রাপ্ত।
[২] যিনদেগানী হযরত মাসুমা, মাহদী মনসুরী, পৃষ্ঠা ১৪ রিয়ায আল-আনসাব থেকে প্রাপ্ত।
[৩] সূরা আ'লে ইমরান ১৬৯..
[৪] দারিয়ায়ে সোখান, সাক্বাযাদেহ তাবরিযী।
[৫] ওয়াদিয়া আ'লে-মুহাম্মাদ, পৃষ্ঠা ১২..
[৬] মির্জা আবু তালিব বায়ুক রচিত অসিলা আল-মাসুমিয়া, পৃষ্ঠা ৬৮.. জাফর মুর্তোযা আমেলী রচিত হায়াতুস সিয়াসিয়া লিল ইমাম আর রেযা আঃ পৃষ্ঠা ৪২৮..
[৭] আলী আকবর তোশায়েদ রচিত
কিয়াম সাদা'ত আলাভী, পৃষ্ঠা ১৬৮..
অনুবাদ: হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা মাসুম আলী গাজী (নাজাফ ইরাক)
আপনার কমেন্ট